হরিণাকুন্ডুতে সারের কৃত্রিম সংকট চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কা
এম, সাইফুজ্জামান তাজু, হরণিাকুণ্ডঃ
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডতে পরিবেশকদের (ডিলার) বিরুদ্ধে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। এতে আমন ধানের চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গাফিলতিতে এই অবস্থার জন্য দায়ী করছেন তারা। তবে কৃষি কর্মকর্তা অভিযোগ অস্ব্বীকার করে বলছেন সারের বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার রয়েছেন ১০ জন। রয়েছেন আরও ৭৫ জন খুচরা সার বিক্রেতা। চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর কৃষিজমিতে প্রায় ২৫ হাজার কৃষক আমন ধানের চাষ করছেন। ইতোমধ্যে কৃষকরা ধানের চারা রোপণ শেষে প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সার বিক্রি করছেন না বিসিআইসি পরিবেশকরা (ডিলার)। যদিও নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে উত্তোলিত সারের ৫০ ভাগ সমহারে এসব খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রির বাধ্যবাধতা রয়েছে। ফলে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সার না পেয়ে ডিলারদের কাছে ছুটছেন কৃষকরা। তারাও সার সংকটসহ নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দিচ্ছেন কৃষকদের। আবার কোথাও কোথাও বেশি দাম দিলে মিলছে সার। এর সঙ্গে রয়েছে অপ্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক বিক্রিসহ নানা অজুহাত।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৭নং রঘুনাথ পুর ইউনিয়নের শ্রীফলতোলা গ্রামের,
মুকুল হোসেন জানান আমি চলতি মৌসুমে ৪বিঘা ধান লাগিয়েছি কিন্তু কোথাও সার পাচ্ছিনা তবে শ্রীফলতোলা বাজারে গেলে কিছু সার পাওয়া যাচ্ছে আর বাংলা টি এসপি বলছে নাই।আর সেই একই সার চড়পাড়া বাজারের ডিলারে মিলছে বস্তা প্রতি ২-৩শত টাকা বেশিতে চড়া দামে।
উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আজিবর রহমান জানান, তিনি চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ছয় বিঘা জমিতে ধানের চাষাবাদ করেছেন। বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে সার না পেয়ে তিনি উপজেলার পার্বতীপুর এলাকার বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার মেসার্স কালাম ট্রেডার্সে যান সার কিনতে। দু’দিন তাকে সার নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
আহাদনগরের কৃষক আলী জানান, তিনিও ওই ডিলারের কাছে সার কিনতে গেলে প্রথম দু’দিন সার নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ইউরিয়া সারের সঙ্গে আরও অপ্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক নেওয়ার শর্তে তাকে সার দেওয়া হয়। এমন অভিযোগ অসংখ্য কৃষকের।
এ ছাড়া বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে শহরের মাহবুব ট্রেডার্সের বিরুদ্ধেও। একজন কৃষক অভিযোগ করেন, তিনি মঙ্গলবার ওই ডিলারের কাছে সার কিনতে গেলে প্রথমে তাকে সার নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে ৮২০ টাকা দরে এক ব্যাগ সার দেওয়া হয়। যদিও সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্য ৮০০ টাকা।
উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার খুচরা সার বিক্রেতা মোকাররম হোসেন তাহাজ জানান, তিনি প্রতি মাসে ৭০-৮০ ব্যাগ ইউরিয়া সার পেতেন। কিন্তু বর্তমানে অনুমোদিত ডিলারের কাছে সার আনতে গেলে সার নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সার ডিলার মেসার্স কালাম ট্রেডার্সের মালিক আবুল কালাম আজাদ লুলু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সময়মতো ডিপো থেকে সার না পাওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। কৃষককে সার না দিয়ে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। তবে খুচরা বিক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সার দেওয়া যাচ্ছে না।
মাহবুব ট্রেডার্সের মালিক রাসেল জানান, সারের একটু সংকট হয়েছিল। বর্তমানে কোনো সংকট নেই। দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।
ইউএনও সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, সার নিয়ে অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, সার নিয়ে কৃষকদের কোনো ধরনের ভোগান্তি ও অনিয়ম হলে তা সহ্য করা হবে না।