ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে বাবা মায়ের বিচ্ছেদে কপাল পুড়েছে ৩ সন্তানের,
মোঃ ইনছান আলী
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,
ঝিনাইদহ অনলাইন,
১৮-০৮-২১ইং
আসিফ যখন ১ বছরের শিশু। তখন হঠাৎ জ্বর হয়েছিল। সাধারন জ্বর ভেবে বাবা মা তখন কোন গুরুত্ব দেননি। পরে সে ক্রমেই অসুস্থ হতে থাকে। সে সময়ে হতদরিদ্র বাবা মা টাকার অভাবে তার ঠিকমত চিকিৎসা করাতে পারেননি। এর কিছুদিন পরেই আসে আরেক ঝড়। কারন মা বাবার মধ্যে অবনাবনি শুরু হয়। তখন তাদের ৩ ভাই -বোনকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন মা । সর্বশেষ তাদের গতি হয় হতদরিদ্র নানা বাড়ি যশোরের রহমতপুরে। এরপর তার মা আবার স্বামীর বাড়ি আসলেও জায়গাতো হয়েইনি বরং বিচ্ছেদ ঘটেছে। এরপর থেকে শুরু হয় তাদের চরম অসহায়ত্ব। ফলে তাদের আবার ফিরতে হয়েছে সেই নানার বাড়িতে। রক্তের অনেকে থাকলেও পাশে দাড়ায়নি কেউ।
আসিফের মা শাহানারা বেগম জানান, বিচ্ছেদ হওয়ার পরে আসিফদের বাবা ৩ সন্তানের কোনদিন খোঁজ খবর নেইনি পাষন্ড বাবা। বাবা আক্কাস আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। ভাইয়েরা থাকলেও তারা যে যার মত পৃথক সংসার করছেন।
তিনি আরও জানান, মা হয়ে সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে যশোর শহরে একটি ঝুপড়ি ঘর ভাড়া নিয়ে পরের বাসায় বাসায় কাজ করে প্রতিবন্ধি আসিফসহ ৩ সন্তান নিয়ে খেয়ে না থেয়ে বেঁচে আছি। পাশে কেউ না থাকায় অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন আমাদের। এদিকে প্রতিবন্ধি আসিফের বয়স এখন ১১ বছর। নিজের বুকের ধন আসিফ চলাফেরা করতে পারেনা। কথা বললেও বোঝা যায় না।
চিকিৎসক বলেছেন আসিফের লিভারে সমস্যা। তবে ঠিকমত চিকিৎসা করাতে পারলে সুস্থ হয়ে যাবে আসিফ। টাকার অভাবে নিজের সন্তানকে চিকিৎসা করাতে পারছিনা। মা হিসেবে এটা সহ্য করা যে কোন মায়ের জন্য অনেক কষ্টের ব্যাপার। এখন প্রতিমাসে আসিফের ঔষধবাবদ কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়।
তিনি বলেন, আমি বাবার বাড়ি যশোরের রহমতপুরে ভোটার হলেও সন্তানদের পরিচয় তাদের বাবার বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ঝনঝনিয়া গ্রামের ঠিকানায়। বেশ কিছুদিন আগে ওখানকার ইউনিয়েনের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন ও ওই গ্রামের লোকজনের সহযোগীতায় অসহায় আসিফের নামে একটি প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড করে দিয়েছিলেন। সেখানেও ভাগ্য সাথে নেই। এ পর্যন্ত মাত্র এক চালান আসিফের নামে ৪ হাজার টাকা পেয়েছি। পরে আর টাকা আসেনি। অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখলাম একাউন্টে আর কোন টাকা নেই।
আসিফের বাবার বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ঝনঝনিয়া গ্রামের বাসিন্দা শামীম হোসেন জানান, আসিফ তার প্রতিবেশী শিকজান হোসেনের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি প্রতিবন্ধি। বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর তারা অন্যস্থানে চলে গেছে। কিন্ত অসহায় আসিফসহ তাদের ৩ ভাই বোনের বাবার ঠিকানায় বহাল আছে। ফলে তাদের সব কিছু এখানকার ঠিকানায়।
কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কামরুল ইসলাম জানান, আসিফ শারীরিক প্রতিবন্ধি এবং তার গ্রামেই বাড়ি। কিন্ত শুনেছি তার মায়ের সাথে বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এখন তার মা সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকে। তারা বড্ড অসহায়।
কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন সমাজকর্মি রবিউল ইসলাম জানান, প্রতিবন্ধি আসিফের একাউন্টে কোন টাকা নেই। অনলাইনে যখন রেজিষ্ট্রেশন হয় তখন প্রতিবন্ধি আসিফকে ওই গ্রামে খুঁজে পাওয়া যায়নি তাই তার নাম পুনরায় ওঠেনি। তবে তার মা বই নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। ছেলেটি খুব অসুস্থ প্রতিবন্ধি তাই খুব শিঘ্রই তার ভাতার ব্যবস্থা হয় সে জন্য চেষ্টা করবেন ।
কালীগঞ্জের কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন জানান, ঝনঝনিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধি আসিফ অনেক অসহায়। বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর তাদের আরও অসহায়ত্ব বেড়েছে। তারা এখানে থাকে না কিন্ত এখানকার নাগরিক হওয়ায় তাদের খুঁজে বের করে তার নামে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দিয়েছিলেন। এখন শুনছি ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। কেন বন্ধ হলো তা খতিয়ে দেখছেন।
এদিকে যশোরের হৈবতপুর ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, স্বামীর সাথে আসিফের মা শাহানারার ছাড়াছড়ি হওয়ার পর তার নিজ গ্রাম রহমতপুরে ভোটার হয়েছেন। প্রতিবন্ধি আসিফের মা ৩ সন্তান নিয়ে পরের বাসায় কাজ করেন। তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করে।
এছাড়াও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি তাদেও জন্য চেষ্টা করবো। বাবা মায়ের বিচ্ছেদে কপাল পুড়েছে অসহায় মাছুম ৩ সন্তানের বলে তিনি যোগ করেন।